স্তন ক্যান্সার
স্তন ক্যান্সারের কিছু কারণঃ
স্তন কোষের অস্বাভাবিক ও
অনিয়মিত বিভাজন থেকে স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকে ।
কারণঃ (১) বয়সঃ বয়স বাড়ার
সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায় । ( সাধারণত ৪০ বছরের পর )। (২)
পারিবারিক ইতিহাসঃ এক্ষেত্রে মা ও বাবার উভয়ের বংশের মা, খালা, ফুপু, নানি, দাদি
যে কারও থাকলে সম্ভাবনা বেড়ে যায় । (৩) ঋতুস্রাবঃ অল্প বয়সে ঋতুস্রাব হলে বা অধিক
বয়সে বন্ধ হলে ঝুঁকি বেড়ে যায় । (৪) হরমুন রিপ্লেস্মেন্ট থেরাপি (HRT ) ঋতুস্রাব বন্ধ হলে অনেক
মহিলা এটা নিয়ে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি থেকে যায় । (৫) জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি (OCP)দীর্ঘ সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ
বড়ি খেলেও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায় । (৬) স্থলতা (Obesit) ওজন বেড়ে যাওয়া অন্যতম কারণ ।
ঝুঁকি কমানোর উপায়ঃ (১) নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম । (২) সন্তানকে ব্রেষ্টফিডিং ।
(৩) ৩০ বছর বয়সের আগে সন্তানগ্রহণ । (৪) স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যগ্রহণ । (৫) স্ক্রিনিং
(ক) বাড়িতে ব্রেষ্ট শেল্ফ এক্সামিনেশন (খ) ক্লিনিক্যাল ব্রেষ্ট এক্সামিনেশন । (গ)
ডাক্তারের পরামর্শে ম্যামোগ্রাম । মনে রাখা প্রয়োজনঃ (১) স্তনের আকার,
আকৃতি , রং পরিবর্তন । (২) স্তন চামড়া কমলার খোসার ন্যায় হওয়া । (৩) স্তন বা বগলের নচে ঢাকা বা মাংসপিন্ডু
অনুভূত হওয়া । (৪) স্তনবৃন্ত থেকে রস নিঃসরণ
(৫) স্তনে ব্যথা অনুভূত হলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে । সুতরাং এ
বিষয়ে অবেহেলা না করে আমাদের সবাইকে সতর্ক হতে হবে ।
-----ডা. এম এস মলি,
এমবিবিএস, এম্ফিল (খাদ্য ও পুষ্টি, ডিইউ)
স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা
ডা. আফরিন সুলতানা
স্তন ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা প্রাথমিক ভূমিকা পালন করে থাকেন একজন বিশেষজ্ঞ
শল্য চিকিৎসক বা সর্জন (ব্রেষ্ট সার্জন বা জেনারেল সার্জন) । তবে অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ক্যান্সারের সঠিক ও উপযোগী চিকিৎসা নিশ্চিত করতে একজন
সার্জন অন্যান্য বিষয়ে যেমন- (অনকোলজি, রেডিওথেরাপি, রেডিওলজি, প্যাথলজি) বিশেষজ্ঞ
ডাক্তারদের নিয়ে একসঙ্গে চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন, যা MDT (Multi disciplinary Team) চিকিৎসা নামে পরিচিত ।
স্তন ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, যেমন- সার্জারি বা অপারেশন,
কেমোথেরাপি (ক্যান্সার ধ্বংস্কারী ঔষধ), রেডিওথেরাপি(সেক) হরমোন থেরাপি ।
টারগেটেড থেরাপিঃ কোন পদ্ধতিটি রোগীর জন্য উপযোগী তা MDT (Multi
disciplinary Team) নির্ধারণ করে থাকেন । আরও বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে তারপর
সঠুক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ণয় করা হয় ।
সার্জারি বা অপারেশনঃ (ক) স্তনের অপারেশন- একজন বিশেষজ্ঞ সার্জন হিসাবে স্তন
ক্যান্সার রোগের অপারেশনের বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমি জানাতে চাই । ‘অপারেশনের’
এর বিষয়টি সবসময় রোগীদের জন্য অত্যান্ত ভীতিকর কিন্তু মনে রাখবেন ‘প্রাথমিক পার্যায়ে’ নির্ণিত স্তন ক্যান্সারের
প্রথম চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন । দুটি উপায়ে সাধারণত অপারেশন করা হয়ে থাকে । Mastectomy – যাতে পুরো স্তন কেটে ফেলা হয় । দীর্ঘসময় ধরে এই চিকিৎসা বহুল প্রচলিত এবং
স্বীকৃত । Breast Conserving
Surgery –এতে পুরো স্ত না কেটে
শুধু ক্যান্সার আক্রান্ত স্থানটি আশেপাশের কিছু নরমাল টিস্যুসহ ফেলে দেওয়া হয় । এ
ক্ষেত্রে অবশ্যই অপারেশন পরবর্তি সময় রেডিওথেরাপি দিতে হবে । দুই ধরনের অপারেশনে
রোগমুক্ত ও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার
সম্ভাবনায় কোন পার্থক্য নাই বরং Breast Conserving Surgery –এর ক্ষেত্রে রয়েছে অতিরিক্ত কিছু সুবিধা যেমন- এতে সম্পূর্ণ
স্তন না কেটে ক্যান্সার পুরোপুরি অপসারণ করা হয় কিন্তু স্তনের আকৃতির বিশেষ
পরিবর্তন হয় না । অপারেশন ধকল ও ব্যয় অনেকাংশ কমে যায় । এ কারণে অপেক্ষাকৃত নতুন
এই পদ্ধতিটি এখন বিশ্বব্যাপি বহুল ব্যবহৃত ও স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি ।
(খ) Mastectory বা Breast
Conserving Surgery দুই ক্ষেত্রে স্তনের সঙ্গে (Axillary lymph Headine node বা বগলের গুটির চিকিৎসা অত্যাবশ্যক । দুই উপায়ে এই চিকিৎসা
করা হয় । SLNB (Senlimile Lymph
Node Biopsy) এই পদ্ধতি
অত্যাধনিক ও অত্যন্ত কার্যকরি । এতে কাটাছেঁড়া হয় খুব কম এবং অপারেশন পরবর্তি Complication যেমন- Lymphedema ঝুঁকি নেই বললেই চলে । ALND (Axillary Lymph Node Dissection) এতে বগলের বেশ কিছু গুটি বের করে আনা হয় । এ অপারেশন
সাধারণত SLNB পজিটিভ থাকলে অথবা SLNB ছাড়াও করা হয়ে থাকে । এতে Lymphoedema, Shoulder Mobility Restriction Numbness এর ঝুঁকি বেশি থাকে ।
কেমোথেরাপিঃ সাধারণত স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় পরবর্তী সময়ে Adjuvant Chemotherapy দেওয়া হয়ে থাকে এবং তা অনকোলজিষ্ট দিয়ে থাকেন । তবে অনেক ক্ষেত্রে টিউমার বেশি
বড় থাকলে Chemotherapy (Neo
Adjuvant) অপারেশনের আগে নিতে হতে
পারে । সাধারণত ৬-৮টি ডোজ (প্রতি মাসে একটী করে) ও/ঠ বা রক্তনালির মাধ্যমে
ইঞ্জেকশন দিয়ে দেওয়া হয় ।
রেডিওথেরাপিঃ রেডিওথেরাপি স্তন ও বগলে দুই জাগায় দিতে হতে পারে এবং তা নির্ভর করে রোগের
চিকিৎসার ধরণ ও অপারেশন পরবর্তী (যেমন-Mastectomy/Lumpectomy এবং SLNB) বায়োপসি রিপোর্টের ওপর ।
Hormone Therapy / হরমোন থেরাপিঃ যাদের ER/RR (ইন্ট্রোজেন ও প্রোজেষ্টরন হরমোন রিপেষ্টার) পজেটিভ থাকে তাদের এই চিকিৎসা
দেওয়া হয়ে থাকে । সাধারণত অপারেশন পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিনের জন্য (অত্যন্ত ৫ বছর)
ঔষধ খেতে হয় ।
Targeted Therapy / টারগেটেড থেরাপিঃ HER-2 রিপেষ্টার পজেটিভ রোগীদের সাধারণত এই চিকিৎসা দেওয়া হয় । ক্যান্সার রোগের
চিকিৎসা একটি দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া ।
লেখকঃ সার্জারী বিশেষজ্ঞ
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাস্পাতাল ।
সংগ্রহে-- http://www.jfpbooks.blogspot.com
স্তন ক্যান্সার
Reviewed by RitonRH
on
December 25, 2018
Rating:

No comments: