শিশুর হাঁপানি হলে কি করবেন
হাঁপানি রোগের সূচনা এবং প্রকাশের সব
কারণ বেশ জটিল । বংশগত ধারা এবং পরিবেশের নানা উপাদানের সংযোগে রোগের উজ্জীবন ঘটে
। বাচ্চাদের বেলায় এ রোগের সংজ্ঞা নিরূপণ করা খুব সহজ নয় । কেননা সর্দি, কাশি,
নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি রোগে ঘন ঘন আক্রান্ত শিশু হাঁপানির
মতো লক্ষণ নিয়ে আসতে পারে । কোনো বাচ্চাকে পরীক্ষা করে যদি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের
কষ্টজনিত অসাভাবিক আওয়াজ যা সবসময় অথবা কিছুদিন পর পর শোনা যায়, যার সঙ্গে সচারচর
কাশি থাকে তবে শিশুটি হাঁপানিতে ভুগছে মনে করতে হবে । হাঁপানি আক্রান্ত বাচ্চা
প্রধানত শ্বাসকষ্টে ভুগে থাকে । বারবার এ অসুখে আক্রান্ত হয় এবং বারবার
সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার সাহায্যে আবার কখনোবা নিজে নিজেই সেরে উঠে । অ্যালার্জিজনিত
বা এটোপিক হাঁপানি শিশুর অল্প বয়সে হতে দেখা যায় । কোনো খাবার জিনিস কিংবা ঔষধে
বাচ্চার অ্যালার্জি দেখা গেলে তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে রক্তে বিভিন্ন রাসায়নিক
পদার্থের তৈরি ঘটে । এ সব পদার্থ পরে সংবেদনশীল শ্বাসনালিকে সংকুচিত করে । এধরণের
হাঁপানিতে দেখা যায় মা-বাবা অথবা বাবার দিকে কারও মধ্যে হাঁপানি বা অ্যালার্জির
বংশগত উপস্থিতি । দেখা যায় ধোঁয়া, ধূলাবালি, পশুর লোম, পলক, ঘাস এবং ফুলের রেণু,
কিছু খাবার হাঁপানির উৎপত্তি ঘটায় ।
হাঁপানি কিভাবে
নির্ণয় করবেনঃ
(ক) হাঁপানি বা অ্যালার্জির পারিবারিক ইতিহাস ।
(খ) বাচ্চা বারবার শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছে এবং শাঁ শাঁ
শব্দ শোনা গেলে ।
(গ) সব সময় অথবা বারে বারে কাশি লেগে থাকলে ।
(ঘ) রাতে শোবার বেলায় বা ভোরের দিকে কাশি বা শ্বাসকষ্টের
আওয়াজ ।
(ঙ) উপসর্গ দেখা দেওয়ার সূচনা হিসাবে কোনো ভাইরাস জ্বর,
ব্যায়াম, মানসিক চাপ অথবা বিশেষ কোনো খাবার বা আবহাওয়া জড়িত আছে বলে মনে হলে ।
আধুনিক চিকিৎসাঃ
বাচ্চাদের হাঁপানি রোগের চিকিৎসায় অনেক বিপ্লব এসেছে যেসব
উদ্দেশ্যকে চিন্তা করে চিকিৎসাকে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে যেগুলো হলোঃ *
বাচ্চার শ্বাসকষ্টজনিত কষ্ট লাঘব করে সে যেন ঘরে এবং স্কুলে স্বাভাবিক কার্যকর
জীবনযাপন করতে পারে । * ফুসফুসে স্বাভাবিক কার্যাদি বজায় রাখা ।
প্রধান ধাপগুলো হলোঃ
(ক) পরিহার করাঃ ধোঁয়া, ধুলা, ঠান্ডা
জাতীয় খাবার বা অন্য কোনো জিনিসের প্রতি বাচ্চার অ্যালার্জি- যে সব কারণে বাচ্চার
শ্বাসকষ্টের শুরু সেসব থেকে বাচ্চাকে যতটা সম্ভব বাঁচানো ।
(খ) ধাপে ধাপে চিকিৎসাঃ এ ব্যাপারটি
একটি নতুন অগ্রগতি ।
--অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ
বক্ষ্যব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইকবাল চেষ্ট সেন্টার,
মগবাজার ওয়্যারলেস, ঢাকা ।
শিশুরা যদি নাক ডাকে
নাক ডাকার সমস্যার সঙ্গে আমরা সবই পরচিত, যা শিশুদের মাঝেও
দেখা যেতে পারে । শিশু যদি নিয়মিত নাক ডাকে তবে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে ।
শিশুদের নাক ডাকার কারণঃ ঠান্ডা লেগে বা অ্যালার্জিজনিত নাক বন্ধ/জ্যাম হয়ে যাওয়া । *টনসিল
ও নাকের পেছনে গলার ওপর দিকে এডিনয়েড গ্রন্থি প্রদাহ বা সংক্রামণে বড় হয়ে গেলে
শ্বাসকষ্ট বা নাকে শব্দ হয় ।* দুই নাকের মধ্যবর্তী পর্দা বেশি বেঁকে
থাকলেও নাকে শব্দ হয় । * জন্মগতভাবেই এমন থাকতে পারে । * সাইনাস সমস্যায় বা প্রবাহে । * স্থূল শিশুদের
নাক ডাকে, যাদের গলায় বায়ু চলাচলের পথ সংকীর্ণ হয়ে আসে । * থাইরয়েডর
সমস্যা ও গ্রোথ হরমোনের আধিক্যজনিত রোগে । (অ্যাক্রোমেগালি) ।
স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিঃ শিশুর ঘুমের সময় শ্বাসনালিতে বায়ু চলাচল বাধাগ্রস্থ হয়,
এতে পুনঃপুন স্বল্পকালীন শ্বাসরোধ হয় এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে । একে স্লিপ অ্যাপনিয়া
বলে । ফলে দিনের বেলায় ক্লান্তিভাবে থাকে এবং শিশু খিটখিটে মেজাজের হয়ে যায় । তীব্র
মাথা ব্যথায় ভোগে । শিশু কোনো কাজে/স্কুলে মনোসংযোগ করতে পারে না ফলে শেখায় সমস্যা
হয় এবং মেধা বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয় । সমস্যার সমাধান না করলে শিশু হাবাগোবা হয়ে যেতে
পারে । শারীরিক বৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশষ্কা তৈরি হয় ।
রোগ নির্ণয়ঃ রোগের ইতিহাস- *নাক ডাকা কতটা মারাত্মক? * নাক
ডাকা কি ঘুমের মধ্যে শারীরিক অবস্থানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নাকি যেকোনো অবস্থানেই
নাক ডাকেন? * রোগী কতদিন থেকে নাক ডাকে? * OSA-এর সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো ক্লিনিক্যাল বৈশিষ্ট/লক্ষণ রয়েছে কি? * প্রতি রাতে নিয়মিত শ্বাস বন্ধ হয়ে
যাওয়া * হরমোনজনিত সমস্যা অথবা অন্যান্য রোগ যেমন ডায়াবেটস অথবা হাইপো
থাইরয়ডিজম ।
পরীক্ষা-নিরিক্ষাঃ
নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শিশুকে শারীরিকভাবে পরীক্ষা করে দেখবেন এবং
প্রয়োজন হলে কিছু পরীক্ষা করবেন যেমন- * এক্স-রে এডেনয়েড *
নাকের ও কন্ঠনালির অ্যান্ড্রোস্কপি * থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা *
পলিসমোগ্রাফি-স্লিপ ল্যাবে ঘুমন্ত রোগীর শরীরের অক্সিজেনের পরিমাণ, ইসিজি, ইইজি,
ইএমজি, ইওজি, শ্বাস-প্রশাসের ধরণ ইত্যাদি মনিটর করা হয় ।
সমস্যার ঘরোয়া
সমাধানঃ * অ্যালার্জি বা ঠান্ডা লাগা থেকে প্রতিরোধ করুন । *
বিছানার মাথার দিক কয়েক ইঞ্চি উঁচুতে রাখা উচিত । * চিত না হয়ে বরং এক
কাত হয়ে শোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলান । * ঘুমানোর আগে বেশি ভরপেট না-খাওয়া
ভালো ।
চিকিৎসাঃ নাক
বাঁকা, এডিনয়েড, টনসিল বা স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ
অনুযায়ী প্রয়োজনে অপারেশন করে নিন । * ঘুমের সময় CPAP/BIPAP মেশিন ব্যবহার ।*
--অধ্যাপক ডা.
মনিলাল আইচ লিটু
বিভাগীয় প্রধান,
ইএনটি
স্যার সলিমুল্লাহ
মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল
ঢাকা ।
শিশুর- হাঁপানি এবং নাক ডাকা
Reviewed by RitonRH
on
January 02, 2019
Rating:

No comments: